Dhaka ১২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইন আছে, প্রয়োগ নেই

Reporter Name
  • আপডেট ০৪:৫৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
  • / ৩৩ বার পঠিত হয়েছে

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার নাম প্রথম সারিতে থাকছে। এ শহরের বায়ু যে বিষে পরিণত হয়েছে, তা বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এরপরও বায়দূষণ রোধে আমরা আসলে কী করছি? ঢাকার আকাশে ধোঁয়া আর ধুলার স্তর দিন দিন আরও ঘন হয়ে উঠছে। অথচ এই দূষণের উৎস ও প্রতিকার—দুটিই আমাদের জানা। আমাদের হাতে আইন আছে, নীতিমালা আছে, এমনকি রয়েছে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনাও; কিন্তু নেই কার্যকর প্রয়োগ। এই ব্যর্থতাই আমাদের নাগরিক জীবনে এক নীরব মহামারির জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি একটি সেমিনারে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, নগর-পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক ও গবেষকেরা পরিবেশের চিত্র যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বিপর্যয়করও। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে ঢাকায় একিউআই মাত্রা ১২৪-এ পৌঁছেছিল এবং এই মাত্রা টানা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল—যা বিশ্বে নজিরবিহীন। জনঘনত্বের চাপে, যানবাহনের ধোঁয়ায়, নির্মাণকাজের ধুলায় এবং ইটভাটাসহ নানা উৎস থেকে প্রতিনিয়ত যে বায়ু আমরা গ্রহণ করছি, তা এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা ভয়াবহ—২০২১ সালে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল। এই সংখ্যা শুধু মৃত্যুই নয়, অর্থনীতিতে বিশাল ক্ষতির বার্তা দেয়। চিকিৎসা ব্যয়, কর্মক্ষমতা হ্রাস ও প্রজনন স্বাস্থ্যেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

সমস্যা ও সমাধান—দুটিই আমাদের সামনে স্পষ্ট। পরিবেশসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা, আদালতের নির্দেশনা, এমনকি বাস্তবায়নের জন্য নিয়োজিত সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ও আছে। কিন্তু কার্যকর মনিটরিং ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্মাণক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না, শিল্পকারখানায় দূষণরোধী প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় না এবং ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনাগুলোও উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

এখন সময় এসেছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবহেলার এই চক্র ভাঙার। প্রথমত, পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে, যাতে শিল্পোন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা একসঙ্গে চলতে পারে। তৃতীয়ত, নাগরিকদের সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরাও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাজধানীবাসীর নিজেদের ভালো থাকার জন্য, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। তা ছাড়া রাজধানী শহর হিসেবে এর যে আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে, সে জন্য ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ করা আরও বেশি জরুরি। ফলে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতেই হবে।

সম্পর্কিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

আইন আছে, প্রয়োগ নেই

আপডেট ০৪:৫৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার নাম প্রথম সারিতে থাকছে। এ শহরের বায়ু যে বিষে পরিণত হয়েছে, তা বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এরপরও বায়দূষণ রোধে আমরা আসলে কী করছি? ঢাকার আকাশে ধোঁয়া আর ধুলার স্তর দিন দিন আরও ঘন হয়ে উঠছে। অথচ এই দূষণের উৎস ও প্রতিকার—দুটিই আমাদের জানা। আমাদের হাতে আইন আছে, নীতিমালা আছে, এমনকি রয়েছে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনাও; কিন্তু নেই কার্যকর প্রয়োগ। এই ব্যর্থতাই আমাদের নাগরিক জীবনে এক নীরব মহামারির জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি একটি সেমিনারে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, নগর-পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক ও গবেষকেরা পরিবেশের চিত্র যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বিপর্যয়করও। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে ঢাকায় একিউআই মাত্রা ১২৪-এ পৌঁছেছিল এবং এই মাত্রা টানা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল—যা বিশ্বে নজিরবিহীন। জনঘনত্বের চাপে, যানবাহনের ধোঁয়ায়, নির্মাণকাজের ধুলায় এবং ইটভাটাসহ নানা উৎস থেকে প্রতিনিয়ত যে বায়ু আমরা গ্রহণ করছি, তা এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা ভয়াবহ—২০২১ সালে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল। এই সংখ্যা শুধু মৃত্যুই নয়, অর্থনীতিতে বিশাল ক্ষতির বার্তা দেয়। চিকিৎসা ব্যয়, কর্মক্ষমতা হ্রাস ও প্রজনন স্বাস্থ্যেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

সমস্যা ও সমাধান—দুটিই আমাদের সামনে স্পষ্ট। পরিবেশসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা, আদালতের নির্দেশনা, এমনকি বাস্তবায়নের জন্য নিয়োজিত সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ও আছে। কিন্তু কার্যকর মনিটরিং ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্মাণক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না, শিল্পকারখানায় দূষণরোধী প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় না এবং ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনাগুলোও উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

এখন সময় এসেছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবহেলার এই চক্র ভাঙার। প্রথমত, পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে, যাতে শিল্পোন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা একসঙ্গে চলতে পারে। তৃতীয়ত, নাগরিকদের সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরাও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাজধানীবাসীর নিজেদের ভালো থাকার জন্য, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। তা ছাড়া রাজধানী শহর হিসেবে এর যে আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে, সে জন্য ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ করা আরও বেশি জরুরি। ফলে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতেই হবে।