গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

- আপডেট ০৬:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
- / ১১৫ বার পঠিত হয়েছে
অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া মানবিক ত্রাণ প্রবেশের সরবরাহের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। তবে এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র।
আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করল।
সিনহুয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত ভোটে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল একমাত্র দেশ, যারা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১৪ সদস্যদেশ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেয়।
প্রস্তাবে গাজায় ইসরায়েলের হাতে আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তিরও আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি জিম্মিদের মুক্তির সঙ্গে যথাযথভাবে সংযুক্ত করা হয়নি, ফলে প্রস্তাবটি তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
ভোটের আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এই বিরোধিতায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার ভাষায়, “সংঘাত শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়ে আসছে—ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার প্রয়োগ করে হামাসকে পরাজিত করা এবং ভবিষ্যতে যাতে তারা আর কোনো হুমকি সৃষ্টি না করতে পারে, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।”
নিরাপত্তা পরিষদের কয়েকটি সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর প্রতি তীব্র নিন্দা, রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে। তারপরও একটি দেশকে রক্ষার জন্য এসব লঙ্ঘন থামানো হচ্ছে না বা জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত অসিম আহমাদ যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কড়া সমালোচনা করেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘কাউন্সিলের বিবেকে নৈতিক অবক্ষয়’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং জানান, বিশ্ব রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।
জাতিসংঘে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেরোম বোনাফোঁ বলেন, “আবারও কাউন্সিল নিজেদের ঘাড় থেকে দায়িত্বের বোঝা ঝেড়ে ফেলেছে। যদিও, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বেশিরভাগ সদস্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এক।”
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী হামাস যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছে এবং আবারও দাবি করেছে, ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ওয়াশিংটন ‘গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে, আগ্রাসনে সমর্থন যোগাচ্ছে এবং অনাহার, ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা–সংক্রান্ত ১৪টি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি প্রস্তাব পাস হয়েছে। গতকালের ভোটাভুটি ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরের পর প্রথম ভোটাভুটি।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভোটের পর তিনি এবার সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ভোটের উদ্যোগ নেবেন।