Dhaka ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুপচাঁচিয়ায় নামি দামী ব্রান্ডের নকল প্রসাধনী বিক্রি, প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা

সুশান্ত মালাকার নিজস্ব প্রতিনিধিঃ=
  • আপডেট ০৮:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • / ১৬৯ বার পঠিত হয়েছে

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বিভিন্ন দোকানে দেশি বিদেশী নামি দামী ব্রান্ডের প্রসাধনী কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারন ক্রেতারা। উপজেলা সদরের নিউ মার্কেট, উপজেলা রোড় ও বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটে কসমেটিক্স দোকানগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিকস পণ্য। এ সকল দেশি পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিকসের দিকে বেশি ঝুঁকছে মানুষ। বাজারের দোকানগুলোতে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী এসব ব্র্যান্ডের কসমেটিকস। তবে সহজলভ্যে পাওয়া এসব প্রসাধনীর অধিকাংশই নকল। কয়েকটি অসাধু ব্যবসায়ী আসল ব্র্যান্ডের নামে নকল পণ্য বাজারে সরবরাহ করছে। তাদের ফাঁদে পড়ে এসব নকল পণ্য কিনে এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত আর্থিকভাবে প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি পড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
মানুষ বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তেল, সাবান, শ্যাম্পু, মেহেদি, লিপস্টিক, নেইল পলিশ, বিভিন্ন ধরনের লোশন, ক্রিম, ভ্যাসলিন, বডি স্প্রেসহ আরও অনেক প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে। ভোক্তাদের বিপুল চাহিদাকে পুঁজি করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী নকল ও মানহীন প্রসাধন সামগ্রী বাজারজাত করছে। অনৈতিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তারা শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে নানারকম ক্ষতির মুখে। ফুটপাত থেকে শুরু করে স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোয় এসব ভেজাল ও নকল সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার প্রান্তিক পর্যায়ে ফেরি করেও বিক্রি করা হয় ক্ষতিকর এসব প্রসাধনী। শীতকালে নকলবাজদের অপকর্মের মাত্রা যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। সাধারণ ক্রেতারা সরল বিশ্বাস এবং অজ্ঞতার ফলে এসব নকল ও মানহীন প্রসাধন সামগ্রী কিনে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ত্বকের ক্ষতির শিকার হচ্ছে। মুখ, হাত ও পায়ের চামড়ায় ক্ষত, পুড়ে যাওয়া, চুলকানি, চুল পড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে মানহীন নকল প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে। আসল নামে তৈরিকৃত এসব নকল পণ্য খুবই সস্তামূল্যে বাজারে ছাড়া হয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলোর আসল-নকল বোঝা খুবই কঠিন। মানুষ এগুলো আসল ভেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছে। আসল বডি স্প্রের সেন্টের কাছাকাছি সেন্ট ব্যবহার করায় সাধারণ মানুষ আসল-নকল বুঝতে পারে না।

অনুসন্ধানে ও নাম প্রকাশ না করা সত্বে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, এ সকল কসমেটিক্স সামগ্রী ঢাকার চকবাজার থেকে আনা হয়। দেশের বিভিন্ন কোম্পানী ও বিদেশী নামকরা কোম্পানীর পণ্য হুবহু নাম অথবা নামে একটি অক্ষর পরিবর্তন করে থাকে যেমন, মেরিলে অনুকরণ মারিল, মেরিট, মরিল, মোরিন। জুঁই নারকেল তেলের অনুকরণ জুহি, জুন, তিব্বতের অনুকরণ বিব্বাত, তিবত। এ্যারোমটিকের অনুকরণ এ্যারোমা, এ্যারোমেকি, এ্যারোমেরিট ইত্যাদি। বিদেশী পণ্যের ক্ষেত্রে খালি কৌটা কিনে নকল পণ্য ঢোকানো হয়। যখন এসব পণ্য দোকানে বিক্রি করা হয় তখন আসল পণ্যের সঙ্গে এগুলোর দামের অনেক পার্থক্য থাকে। অনেকে আসল নকল বুঝতে না পেরে এগুলো ক্রয় করে মানুষ হচ্ছে প্রতারিত। বাজারে প্রসাধনী কিনতে আসা ক্রেতা শ্রীমতি কনকা বলেন, কয়েকদিন আগে বাজার থেকে একটি ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনি, কিন্তু দোকানদার আমাকে ফেয়ার এন্ড লাডলী দেয়। এটি ব্যবহার করে আমার ত্বকে সমস্যা হয়েছে।

অন্য ক্রেতা পিংকি বলেন, নকল প্রসাধনী বিক্রির দায়ে জরিমানা টিভিতে ও পত্রিকায় দেখতে পাওয়া য়ায়, কিন্তু কোনটা আসল কোনটা নকল কিভাবে বুঝব আর তার কোন উপায় নেই। দোকানী যেটা ভালো বলে দেন, সেটা আমরা বিশ্বাস করে কিনে নিই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাজারের এক কসমেটিক্স ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি পণ্যের গায়ে বারকোট লাগানো থাকার কথা, বারকোটও থাকে, কিন্তু এগুলো স্ক্যান্ করলে পণ্য সর্ম্পকিত তথ্য উপস্থাপিত হয় না। আমরাও চাই বাজার থেকে নকল প্রসাধনী উঠে যাক। ক্রেতাদের কষ্টের টাকায় ভালোকিছু পেলে আমরা খুশি। নকল প্রসাধনী ব্যবহারে থাকে স্বাস্থ্যঝুঁকি। অচিরেই বাজার থেকে এ সকল নকল প্রসাধনী বাজেয়াপ্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটরিং চায় ক্রেতা সাধারন। ক্রেতারা আরো বলেন, নকল ও মেয়াদত্তীর্ণ এবং ভেজাল পণ্য বিক্রি করায় দায়ে ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযান চালিয়ে আর্থিক জরিমানা করেন। তারপরেও থেমে নাই এই নকল পণ্য বিক্রি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ এইচ, সি, কর্মকার (সুদীপ) বলেন, নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ বেশি হয় এবং নকল প্রসাধনী যদি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয় তাহলে ক্যান্সারের মত বড় ধরনের রোগও হতে পারে। কসমেটিক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।

সম্পর্কিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

দুপচাঁচিয়ায় নামি দামী ব্রান্ডের নকল প্রসাধনী বিক্রি, প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা

আপডেট ০৮:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বিভিন্ন দোকানে দেশি বিদেশী নামি দামী ব্রান্ডের প্রসাধনী কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারন ক্রেতারা। উপজেলা সদরের নিউ মার্কেট, উপজেলা রোড় ও বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটে কসমেটিক্স দোকানগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিকস পণ্য। এ সকল দেশি পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিকসের দিকে বেশি ঝুঁকছে মানুষ। বাজারের দোকানগুলোতে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী এসব ব্র্যান্ডের কসমেটিকস। তবে সহজলভ্যে পাওয়া এসব প্রসাধনীর অধিকাংশই নকল। কয়েকটি অসাধু ব্যবসায়ী আসল ব্র্যান্ডের নামে নকল পণ্য বাজারে সরবরাহ করছে। তাদের ফাঁদে পড়ে এসব নকল পণ্য কিনে এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত আর্থিকভাবে প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি পড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
মানুষ বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তেল, সাবান, শ্যাম্পু, মেহেদি, লিপস্টিক, নেইল পলিশ, বিভিন্ন ধরনের লোশন, ক্রিম, ভ্যাসলিন, বডি স্প্রেসহ আরও অনেক প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে। ভোক্তাদের বিপুল চাহিদাকে পুঁজি করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী নকল ও মানহীন প্রসাধন সামগ্রী বাজারজাত করছে। অনৈতিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তারা শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে নানারকম ক্ষতির মুখে। ফুটপাত থেকে শুরু করে স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোয় এসব ভেজাল ও নকল সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার প্রান্তিক পর্যায়ে ফেরি করেও বিক্রি করা হয় ক্ষতিকর এসব প্রসাধনী। শীতকালে নকলবাজদের অপকর্মের মাত্রা যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। সাধারণ ক্রেতারা সরল বিশ্বাস এবং অজ্ঞতার ফলে এসব নকল ও মানহীন প্রসাধন সামগ্রী কিনে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ত্বকের ক্ষতির শিকার হচ্ছে। মুখ, হাত ও পায়ের চামড়ায় ক্ষত, পুড়ে যাওয়া, চুলকানি, চুল পড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে মানহীন নকল প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে। আসল নামে তৈরিকৃত এসব নকল পণ্য খুবই সস্তামূল্যে বাজারে ছাড়া হয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলোর আসল-নকল বোঝা খুবই কঠিন। মানুষ এগুলো আসল ভেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছে। আসল বডি স্প্রের সেন্টের কাছাকাছি সেন্ট ব্যবহার করায় সাধারণ মানুষ আসল-নকল বুঝতে পারে না।

অনুসন্ধানে ও নাম প্রকাশ না করা সত্বে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, এ সকল কসমেটিক্স সামগ্রী ঢাকার চকবাজার থেকে আনা হয়। দেশের বিভিন্ন কোম্পানী ও বিদেশী নামকরা কোম্পানীর পণ্য হুবহু নাম অথবা নামে একটি অক্ষর পরিবর্তন করে থাকে যেমন, মেরিলে অনুকরণ মারিল, মেরিট, মরিল, মোরিন। জুঁই নারকেল তেলের অনুকরণ জুহি, জুন, তিব্বতের অনুকরণ বিব্বাত, তিবত। এ্যারোমটিকের অনুকরণ এ্যারোমা, এ্যারোমেকি, এ্যারোমেরিট ইত্যাদি। বিদেশী পণ্যের ক্ষেত্রে খালি কৌটা কিনে নকল পণ্য ঢোকানো হয়। যখন এসব পণ্য দোকানে বিক্রি করা হয় তখন আসল পণ্যের সঙ্গে এগুলোর দামের অনেক পার্থক্য থাকে। অনেকে আসল নকল বুঝতে না পেরে এগুলো ক্রয় করে মানুষ হচ্ছে প্রতারিত। বাজারে প্রসাধনী কিনতে আসা ক্রেতা শ্রীমতি কনকা বলেন, কয়েকদিন আগে বাজার থেকে একটি ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনি, কিন্তু দোকানদার আমাকে ফেয়ার এন্ড লাডলী দেয়। এটি ব্যবহার করে আমার ত্বকে সমস্যা হয়েছে।

অন্য ক্রেতা পিংকি বলেন, নকল প্রসাধনী বিক্রির দায়ে জরিমানা টিভিতে ও পত্রিকায় দেখতে পাওয়া য়ায়, কিন্তু কোনটা আসল কোনটা নকল কিভাবে বুঝব আর তার কোন উপায় নেই। দোকানী যেটা ভালো বলে দেন, সেটা আমরা বিশ্বাস করে কিনে নিই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাজারের এক কসমেটিক্স ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি পণ্যের গায়ে বারকোট লাগানো থাকার কথা, বারকোটও থাকে, কিন্তু এগুলো স্ক্যান্ করলে পণ্য সর্ম্পকিত তথ্য উপস্থাপিত হয় না। আমরাও চাই বাজার থেকে নকল প্রসাধনী উঠে যাক। ক্রেতাদের কষ্টের টাকায় ভালোকিছু পেলে আমরা খুশি। নকল প্রসাধনী ব্যবহারে থাকে স্বাস্থ্যঝুঁকি। অচিরেই বাজার থেকে এ সকল নকল প্রসাধনী বাজেয়াপ্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটরিং চায় ক্রেতা সাধারন। ক্রেতারা আরো বলেন, নকল ও মেয়াদত্তীর্ণ এবং ভেজাল পণ্য বিক্রি করায় দায়ে ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযান চালিয়ে আর্থিক জরিমানা করেন। তারপরেও থেমে নাই এই নকল পণ্য বিক্রি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ এইচ, সি, কর্মকার (সুদীপ) বলেন, নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ বেশি হয় এবং নকল প্রসাধনী যদি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয় তাহলে ক্যান্সারের মত বড় ধরনের রোগও হতে পারে। কসমেটিক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।