Dhaka ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্রাহকেরা কেন ভোগান্তির শিকার হবেন

Reporter Name
  • আপডেট ০৪:৫৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
  • / ৪৬ বার পঠিত হয়েছে

বিভিন্ন দাবি নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা লাগাতার আন্দোলন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন গ্রাহকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের সাত দফা দাবির মধ্যে আছে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ ও সমিতির চেয়ারম্যানের অপসারণ।

গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঈদের ছুটির আগে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর ফলে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মেরামতের কাজও বন্ধ আছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকেরা। এ অবস্থায় কয়েকটি স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুতের গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার।

গত কয়েক দিনে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের পেছনে ফেরার উপায় নেই। দাবি আদায় করেই কাজে ফিরতে চান তাঁরা।

অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকার অনেকটা নির্বিকার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, তাঁরা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সড়ক অবরোধ করে কোনো সংগঠন আন্দোলন করলে সরকার দ্রুতই দাবি মেনে নেয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন সড়ক বন্ধ করেননি বলেই কি সরকারের চৈতন্যোদয় হচ্ছে না?

বিদ্যুৎ উপদেষ্টার এই যুক্তি মেনে নিয়েও বলব, সমস্যার সমাধান করতে হবে সরকারকেই। আন্দোলনকারী কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়?

সমিতির দাবি কতটা যৌক্তিক আর কতটা অযৌক্তিক, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো আন্দোলনের কারণে পল্লী অঞ্চলের গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বর্ষার মৌসুম চলছে। কোথাও ঝড়বৃষ্টির কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সেটা পুনঃস্থাপনেরও সুযোগ থাকছে না।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের অভিযোগ, ২০১০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রেসক্রিপশনে পল্লী বিদ্যুৎকে বেসরকারীকরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। গত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী এটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। সেটির দায় কেন এ সরকার নেবে?  

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের সব দাবি এখন পূরণ করা সম্ভব না হলে, সেটাও তাঁদের বুঝিয়ে বলতে হবে। সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই। চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ী করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা থাকার কথা নয়।

জনস্বার্থ  উপেক্ষা করে কোনো সংস্কারই প্রত্যাশিত নয়। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের চাকরি সুরক্ষার পাশাপাশি গ্রাহকদের স্বার্থও সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে এ সংকট নিরসনে কাজ করবে। গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলনকারীরাও অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে কীভাবে দাবি পূরণে সচেষ্ট হওয়া যায়, সেটিও দেখবেন আশা করি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

গ্রাহকেরা কেন ভোগান্তির শিকার হবেন

আপডেট ০৪:৫৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

বিভিন্ন দাবি নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা লাগাতার আন্দোলন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন গ্রাহকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের সাত দফা দাবির মধ্যে আছে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ ও সমিতির চেয়ারম্যানের অপসারণ।

গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঈদের ছুটির আগে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর ফলে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মেরামতের কাজও বন্ধ আছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকেরা। এ অবস্থায় কয়েকটি স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুতের গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার।

গত কয়েক দিনে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের পেছনে ফেরার উপায় নেই। দাবি আদায় করেই কাজে ফিরতে চান তাঁরা।

অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকার অনেকটা নির্বিকার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, তাঁরা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সড়ক অবরোধ করে কোনো সংগঠন আন্দোলন করলে সরকার দ্রুতই দাবি মেনে নেয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন সড়ক বন্ধ করেননি বলেই কি সরকারের চৈতন্যোদয় হচ্ছে না?

বিদ্যুৎ উপদেষ্টার এই যুক্তি মেনে নিয়েও বলব, সমস্যার সমাধান করতে হবে সরকারকেই। আন্দোলনকারী কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়?

সমিতির দাবি কতটা যৌক্তিক আর কতটা অযৌক্তিক, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো আন্দোলনের কারণে পল্লী অঞ্চলের গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বর্ষার মৌসুম চলছে। কোথাও ঝড়বৃষ্টির কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সেটা পুনঃস্থাপনেরও সুযোগ থাকছে না।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের অভিযোগ, ২০১০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রেসক্রিপশনে পল্লী বিদ্যুৎকে বেসরকারীকরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। গত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী এটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। সেটির দায় কেন এ সরকার নেবে?  

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের সব দাবি এখন পূরণ করা সম্ভব না হলে, সেটাও তাঁদের বুঝিয়ে বলতে হবে। সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই। চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ী করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা থাকার কথা নয়।

জনস্বার্থ  উপেক্ষা করে কোনো সংস্কারই প্রত্যাশিত নয়। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের চাকরি সুরক্ষার পাশাপাশি গ্রাহকদের স্বার্থও সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে এ সংকট নিরসনে কাজ করবে। গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলনকারীরাও অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে কীভাবে দাবি পূরণে সচেষ্ট হওয়া যায়, সেটিও দেখবেন আশা করি।